gerald's game
চলচ্চিত্র

Movie: Gerald’s Game (2017) – জাফরুল ইসলাম রাজন

  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Genre: Psychological Horror
Director: Mike Flanagan
IMDb: 6.8/10

স্টিফেন কিং এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি এই মুভিতে জেরাল্ড আর জেসি তাদের দীর্ঘ ম্যাড়মেড়ে বৈবাহিক জীবনকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সম্পূর্ণ নির্জন একটা লেক হাউজে অবকাশ যাপনে যায় । উদ্দেশ্য, নিজেদের মধ্যকার বোঝাপড়াটা আরও দৃঢ় করা এবং একই সাথে নিজেদের সেক্স লাইফেও স্পাইস নিয়ে আসা । সেই লক্ষ্যেই জেরাল্ড কিছুটা রাফ সেক্সের পরিকল্পনা করে । জেসির দুই হাত খাটের সাথে হ্যান্ডকাফ দিয়ে লক করে রেখে নিজে একজন স্যাডিস্টের রোল প্লে করে । কিন্তু মাঝপথে হঠাত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায় জেরাল্ড । আর জেসি আটকা পড়ে থাকে লোকালয় থেকে দূর দূরান্তের একটা বাড়িতে খাটের সাথে বাধা অবস্থায় । সামনে পড়ে থাকে নিজের স্বামীর মৃতদেহ । কিভাবে জেসি সারভাইভ করবে এবং এখান থেকে মুক্তি পাবে সেটাই এই মুভির প্লট । 

মুভিটার প্লট শুনে অনেকের মনে হতে পারে একটা রুমে আবদ্ধ, শুধুমাত্র একজন ক্যারেক্টার দিয়ে কিইবা মুভি হবে কিইবা তাতে থাকবে থ্রিল, তার ভুল করছেন । মুভিটা দেখার পর নিচের আলোচনাটা পড়েন । ভাল্লাগবে । 

কিছু বিস্তারিত আলোচনা এবং এন্ডিং এর মর্মদ্ধারঃ (স্পয়লার)
————————————————————————

মুভিটা শুধুমাত্র জেসির ওই হ্যান্ডকাফ থেকেই মুক্ত হওয়ার মুভি না । মুভিটা দেখলেই বোঝা যাবে । তারপরেও কিছু কিছু বিষয় আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় । সেগুলো নিয়েই আলোচনা করছি ।
মুভিটাতে আমি মোটামুটি জেসির ছয়বার মুক্ত হওয়া নোট করেছি । সেটা হোক ভিজিবল হ্যান্ডকাফ থেকে অথবা ইনভিজিবল কোন শেকল থেকে । 

জেসি আটকা পড়া অবস্থায় যখন কুকুরটা এসে জেরাল্ডের হাত থেকে মাংস ছিড়ে খাওয়া শুরু করে সেটা দেখেই জেসির প্রথম মেন্টাল ব্রেকডাউন হয় এবং জেরাল্ডকে হ্যালুসিনেট করা শুরু করে । জেরাল্ডের এই ক্যারেক্টারটা জেসির নিজেরই একটা মস্তিস্ক প্রসূত সত্ত্বা । যেটা জেসিকে মনে করিয়ে দেয় সে কতটা দুর্বল, কিভাবে সে এখানে আটকা পরে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে অথবা তার অবস্টাকল গুলো কি কি । মোটকথা জেসি এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে না সেটাই মনে করিয়ে দেয় জেরাল্ড । এই মেন্টাল প্রেসার থেকেই জেসি আরেকটা জেসিকে হ্যালুসিনেট করা শুরু করে যে কিনা সাহসি এবং দৃঢ়চেতা । দ্বিতীয় জেসির কাজই হচ্ছে আটকা পড়া জেসিকে সাহস যোগানো এবং তার অতীত ঘটনা মনে করিয়ে দেয়া যেটা কাজে লাগিয়ে জেসি সার্ভাইভ করতে পারবে । 

তৃতীয় যেই ক্যারেক্টারকে জেসি হ্যালুসিনেট করে সেটা হচ্ছে অদ্ভুত দর্শনের ক্রিপ্ট ক্রিপার, দ্য মুনলাইট ম্যান । যাইহোক মুভির ক্লাইমেক্সের আগে আমাদেরও মনে হয়েছিল এটা হ্যালুসিনেশন । কিন্তু একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে মুনলাইট ম্যান ছিল রিয়াল । একদম মুভির শুরুতেই এই ক্লু’টা আছে । গাড়ির ভেতর রেডিওতে যে খবর শোনা যায় সেটা হচ্ছে, “Police are investigating a break in and burglary at a county cemetery .“
মুনলাইট ম্যানের বাক্সের ভেতর আমরা মানব হাড়, কাটা কান সহ বিভিন্ন অর্নামেন্টস দেখতে পাই যেগুলো সম্ভবত সে কবরস্থান থেকেই যোগাড় করেছে । দ্বিতীয় ক্লু টা হচ্ছে কুকুর । মুনলাইট ম্যানের আগমন আমরা প্রথম বুঝি কুকুরটার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে । কুকুরটা কারো এগিয়ে আসা পায়ের শব্দ শুনতে পায় আর ঘেউ ঘেউ করে । ওই সময় জেসি ছিল ঘুমন্ত অবস্থায় । কুকুর যেই শব্দটা শুনতে পেয়েছে সেটা জেসির হ্যালুসিনেশন হওয়া সম্ভব না । 

যাইহোক, জেরাল্ড মুনলাইট ম্যান নিয়ে ভয় দেখাতে গিয়ে জেসিকে একপর্যায়ে মাউস বলে সম্বোধন করে । যেটা তাকে তার অতীত একটা ঘটনা মনে করিয়ে দেয় । মুভির ডিপার প্লট হচ্ছে এটা । দুইটা প্লটের নাম দিলাম । বর্তমান প্লট, অতীত প্লট । দুইটা প্লটে ফাইন টিউনিংটা একটু খেয়াল করেন । বর্তমান প্লটে ভয়ঙ্কর মুনলাইট ম্যানের কাছে জেসি একটা মাউস, যেকোনো সময় মুনলাইট ম্যান তাকে মেরে ফেলবে । অতীত প্লটে জেসির বাবা জেসিকে মাউস বলে ডাকে । অতীত প্লটের মুনলাইট ম্যান জেসির বাবা নিজেই । কি জন্য সেটা আমরা মুভি দেখেই বুঝতে পারি । 

এবার আসি ছয়বার জেসির মুক্ত হওয়ার বিষয়ে । প্রথমবার জেসির হাতে ইনভিজিবল শেকলটা পরায় তার বাবা তাদের লেক হাউজের রুমে সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের ঘটনাটা কাউকে না বলার জন্য ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে । জেসি প্রথম মুক্ত হয় অতীত প্লটেই গ্লাসে হাত কেটে যাবার পর তার বাব যখন তার হাতে ব্যান্ডেজ বেধে দেয় । এই মুক্ত হওয়ার বিষয়টা সাইকোলজিক্যাল । এ ধরনের একটা ঘটনার পর সে তার বাবার সাথে পরবর্তিতে একই ছাদের নিচে কিভাবে জীবন অতিবাহিত করবে, কিভাবে ইন্টারেক্ট করবে অথবা আদৌ চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে কিনা, তার বাবার তার প্রতি আচরন কি হবে এ ধরনের একটা মনস্তাত্ত্বিক লড়াই তারমধ্যে ছিল । এই লড়াই থেকে উত্তরণ হয়েছে হাত কাটার পরই । তার বাবার সাথে তার প্রথম ইন্টারেকশনটা হয়ে গেছে । এটা হচ্ছে প্রথম মুক্তির প্রথম ধাপ । মেন্টাল ট্রমা থেকে মুক্ত এখনও হয়নি । 

এখন আবার সেই প্লট শিফটিং এ ফাইন টিউনিং । অতীত প্লটের এই ঘটনা থেকেই বর্তমান প্লটে হ্যান্ডকাফ থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় পায় জেসি । হাত কেটে হ্যান্ডকাফ থেকে মুক্ত হয় । কিন্তু এটাই আসল মুক্তি না । অতীত প্লটে যেহেতু ছিল মুক্তির প্রথম ধাপ । এখানকার মুক্তিও প্রথম ধাপ । দ্বিতীয় মুক্তির প্রথম ধাপ । 

এবার আসি তৃতীয় মুক্তির প্রথম ধাপ । তৃতীয় শেকল অথবা হ্যান্ডকাফটাও ইনভিজিবল । যেটা পরিয়েছে জেরাল্ড । জেরাল্ড ছিল নারীদের প্রতি ডমিনেটেড । সে নারীকে নিয়ে সূক্ষ্ম রসিকতা করত । মেয়েদের মনে করত “লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম ফর ভ্যাজাইনা” । কিন্তু এটা জেনেও জেসি অবজেকশন জানায়নি । জেরাল্ড নিজের ক্যরিয়ারের কথাই চিন্তা করেছে শুধু । যে কারনে জেসি মা হতে পারেনি অর্থাৎ মা হওয়ার বিষয়টাকে গুরুত্বই দেয়নি জেরাল্ড । দ্বিতীয় জেসির কথায় বোঝা যায় জেরাল্ড জেসিকে সমসময় অব্জেক্টিফাইড এবং মিনিমাইজড করে রেখেছে । অর্থাৎ এক ইনভিজিবল ব্যারিয়ার সবসময়ই ছিল । এই ব্যারিয়ার থেকে মুক্তি পায় যখন জেসি তার ওয়েডিং রিং মুনলাইট ম্যানকে দিয়ে দেয় । এটা তৃতীয় মুক্তির প্রথম ধাপ । তিনটা মুক্তির কোনটাই পরিপূর্ণ হয়নি এখনও ।

প্রথম মুক্তি পরিপূর্ণ হয় যখন জেসি সবাইকে তার অ্যাবিউজের ঘটনা বলতে শুরু করে । এটাই তার মেন্টাল ট্রমা থেকে মুক্তি । থিস ওয়াজ দ্য রিয়াল ফ্রিডম ইন দিস মুভি । দ্য ইনার সাইট অভ দ্য মুভি ইস হেয়ার ।

তৃতীয় মুক্তি পরিপূর্ণ হয় যখন জেসি সেলফ ইন্ডিপেন্ডেন্টলি লাইফ লিড করা শুরু করে । নিজের অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানে তার মত ট্রমা দিয়ে যাচ্ছে এমন মানুষকে হেল্প করা শুরু করে । ওমেন এম্পাওয়ারমেন্টকে ইন্ডিকেট করা হয়েছে এখানে । 

দ্বিতীয় মুক্তি ছিল বাস্তব হ্যান্ডকাফ অর্থাৎ বর্তমান প্লটের ঐ লেক হাউজ থেকে যেই মুক্তি সেটা । কিন্তু সেই মুক্তিটাও পরিপূর্ণ নয় । কারন মুক্ত হওয়ার পরেও প্রতি রাতে জেসি মুনলাইট ম্যানকে হ্যালুসিনেট করতে থাকে । তার মাথা থেকে এই মেন্টাল ট্রমাটা যায়নি তখনও । অবশেষে পত্রিকায় দেখতে পায় মুনলাইট ম্যানের খবর এবং বুঝতে পারে যে এই মুনলাইট ম্যান আসলে বাস্তব । মুনলাইট ম্যান যে রোগে আক্রান্ত তাকে বলে আক্রোমেগালি । এই রোগে শরীরের গ্রোথ অ্যাবনরমালি বেড়ে যায় । এছাড়াও মুনলাইট ম্যান ছিল সাইকোলজিক্যালি ডিসঅর্ডার্ড । সে কবরস্থান থেকে মানুষের লাশ তুলে তাদের শরীরের থাকা অলঙ্কার চুরি করত এবং এক পর্যায়ে এই কাজ করতে করতে সে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ খাওয়া শুরু করে । জেরাল্ডের লাশটাকে শুধু কুকুরই খায়নি, মুনলাইট ম্যানও খেয়েছে । জেরাল্ডের ডান চোখ খুব সুন্দর ভাবে তুলে খাওয়া হয়েছে, যেটা কুকুরের পক্ষে সম্ভব না ।
হাউঅ্যাভার, টু অভারকাম দিস ফিয়ার সী হ্যাড টু কনফ্রন্ট হার মনস্টার । এই কারনেই সে কোর্টে গিয়ে মুনলাইট ম্যানের মুখোমুখি হয় । এবং এভাবেই দ্বিতীয় ধাপের পরিপূর্ণ মুক্তি হয় । 

এখন এন্ডিংটাকে আরেকটু ভালভাবে আলোচনা করা যাক ।
এই মুভিতে জেসি ছাড়া যাদেরকে দেখানো হয়েছে সবাই একেকটা মনস্টার । নাও টু অভারকাম অল দীস ফিয়ারস, সী ইমাজিন্ড এভ্রি মনস্টার ইন হার লাইফ উইদিন দ্য মুনলাইট ম্যান । অ্যান্ড সী সেইড টু হিম, “ইউ আর সো মাচ স্মলার দ্যান আই রিমেম্বার” । এই সংলাপটার তাত্পর্য অনেক । ১২ বছরের অতীত জেসিকে আমরা যখন প্রথম দেখি তখন তার মুখের প্রথম সংলাপটা ছিল, “ইট’স সো মাচ স্মলার দ্যান আই রিমেম্বার” । এই কথাটা জেসি বলেছিল তাদের লেক হাউজকে ইঙ্গিত করে । তখন তার বাবার রিপ্লাই ছিল, “কজ, ইউ আর বিগার” । এখানেও জেসি তার ভয়কে জয় করে ফেলেছে । যেকারনে মনস্টারগুলো এখন তার কাছে তুচ্ছ । 

এবার আসি সোলার এক্লিপ্স (সুর্যগ্রহণ) নিয়ে । সুর্যগ্রহন প্রথম দেখি আমরা অতীত প্লটে যখন জেসি অ্যাবিউজের স্বীকার হয় । এবং সেটা পূর্ণ সূর্যগ্রহণ অবস্থায় । সূর্যগ্রহণ কেটে যাওয়াটা আমরা দেখি না । সূর্যগ্রহণের একটা মিথোলজিক্যাল ইম্পর্ট্যান্স আছে । মিথোলজিগুলোতে সূর্যকে মানা হত দেবতা । সূর্যগ্রহণকে তারা ভাবত সূর্যের দেবতার উপর কোন এক ডেভিলের অশুভ ছায়া । মুভিতে সূর্যগ্রহণটা হচ্ছে মেটাফর । জেসি তার জীবনের প্রথম ডেভিলের দেখা পায় সূর্যগ্রহণের সময়ই । দ্বিতীয়বার পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যায় জেসি যখন ওই বাড়ি থেকে মুক্ত হয়ে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছিল । অর্থাৎ প্রকৃত মুক্তি তখনও হয়নি তার প্রমাণ এটা । একেবারে মুভির শেষ দৃশ্যে দেখা যায় নির্ভীক জেসিকে প্রথমবারের মত পূর্ণ সুর্যালোকে হেটে যেতে । এটাই প্রকৃত মুক্তির ইন্ডিকেশন । 

ব্রিলিয়ান্ট এক্সিকিউশন ফ্রম দ্য ডিরেক্টর ।


  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *